ক্যান্সার প্রতিরোধে যে খাবার গুলো এড়িয়ে না চললেই নয়।
মরণব্যাধি ক্যানসারের এখনো কোন ফলপ্রসু প্রতিষেধক আবিস্কৃত না হওয়ায় প্রতিরোধই এর সর্বোত্তম চিকিৎসা। সাধারণত ক্যানসার তৈরি হয় শরীরের অতি দ্রুত অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের মাধ্যমে । ক্যান্সারের কারণ ও প্রতিষেধক আবিস্কারের জন্য বিভিন্ন প্রকারের গবেষণা করা হয়েছে এবং হচ্ছে।
২০১৫ সালের তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে প্রতি বছর নতুন করে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ। বছর বছর এই সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, অনেক খাবার যেমন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় তেমনি এমন খাবার ও আছে যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
যেসব খাবারগুলো ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলঃ
১) বিভিন্ন প্রকার সফট ড্রিংকস :
বাজারের বিভিন্ন কোম্পানির সফট ড্রিংকস বা কোমল পানীয় পাওয়া যায়। প্রাই সকল সফট ড্রিংকসে থাকে ক্ষতিকর রং, অতিরিক্ত সোডা ও কৃত্রিম চিনি। যা আমাদের রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বাড়িয়ে দেয়। মেটাবলিক সিনড্রোম ও ক্যানসার তৈরিতে এই উপাদানটি অনেকাংশেই দায়ী। গবেষণায় দেখা গেছে, কোমল পানীয়তে ‘৪-মিথাইলমিডাজল’ নামের যে রং থাকে, এটি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে।
২) অ্যালকোহল :
অ্যালকোহল আমাদের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর তা কারোরই অজানা নয়।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল মানব দেহে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অ্যাসিটেলডিহাইডে পরিণত হয়ে, যা পরবর্তিতে আমাদের শরীরের ডিএনএ ভেঙ্গে ক্যানসার তৈরি করে।
৩) কীটনাশক ও ক্যামিক্যাল যুক্ত ফলমূল :
বর্তমানে আমাদের দেশে ফরমালিন ছাড়া কোন ফলমুল পাওয়া যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। শুধু কি তাই, সম্প্রতি মাছেও ফরমালিন মেশানোর প্রমান পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া শাকসবজি চাষে তো নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহার এখন সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। আমেরিকান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ফরমালিন এর মত ক্যামিক্যাল ও বিভিন্ন প্রকার কীটনাশক যদি আমাদের দেহে প্রবেশ করে তা কোনো না কোনো ক্যানসার তৈরি করে।
৪) খোলা বাজারের শরবত :
এখন গরম কাল। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা প্রায়ই ফুটপাতের পাশ থেকে বা খোলা বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের শরবত পান করে থাকি।
বাজারের এই শরবতে থাকে দূষিত পানি, বরফ ও ক্ষতিকর রং। এগুলো জন্ডিস, হেপাটাইটিস ও লিভার ক্যানসার সৃষ্টি করে।
৫) প্রক্রিয়াজাত মাংসের খাবার :
বাংলাদেশে এখন ফাস্টফুডের চাহিদা ব্যাপক। যত্রতত্র গড়ে উঠেছে নাম সর্বস্ব রেস্টুরেন্ট। এই সকল ফাস্টফুডের দোকান ও রেস্টুরেন্টের বেকন, হটডগ, মিডলোফ, সসেজ, বার্গার ইত্যাদি খাবারে সোডিয়াম নাইট্রেট থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, সোডিয়াম নাইট্রেটযুক্ত প্রক্রিয়াজাত মাংস মানবদেহে এন নাইট্রোসোতে পরিণত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করে।
৬) আলুর চিপস :
আলু আমাদের একটি জনপ্রিয় সবজি। প্রায় প্রতিদিনই আমরা আলুর কোন না কোন তরকারি খেয়েই থাকি। আলুর রয়েছে অসাধারণ পুষ্টিগুণ। আলুর বিভিন্ন পদের মধ্যে আলুর চিপস ছোট বড় সকলের নিকই খুবই মুখরোচক একটি খাবার। কিন্তু আপনি জানেন কি, আলুর চিপসের স্বাদ মচমচে করার জন্য কৃত্রিম রং, ফ্লেভার, ট্রান্স ফ্যাট ও প্রচুর লবণ মিশানো হয়। যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৭) ফ্রেঞ্চ ফ্রাই :
ফাস্ট ফুডের বিভিন্ন পদের ভিতর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খুবই জনপ্রিয় একটা খাবার। ফ্রেঞ্চ ফ্রাই তৈরির সময় উচ্চ তাপ ও তেলের সংস্পর্শে অ্যাক্রাইলেমাইড সৃষ্টি হয়ে ক্যানসার হয়।
৮) কৃত্রিম চিনি :
কৃত্রিম চিনি অ্যাসপার্টের চিনির চেয়ে ১০ গুণ বেশি মিষ্টি এবং ক্যালোরি শূন্য। ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিতভাবে কৃত্রিম চিনি খেলে ব্রেইন ক্যানসার হতে পারে।
৮) পুরোনো তেল :
হোটেল গুলোতে রান্নার কাজে সাধারণত একই তেল পুনঃপুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পুরোনো ব্যবহৃত তেল দিয়ে বারবার খাবার রান্না করলে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়ে ডিএনএ কে ভেঙে ক্যানসার হতে পারে।
ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা যেহেতু আমাদের হাতে নেই, সেহেতু আমাদের হতে হবে অনেক বেশি সচেতন। খাদ্য তালিকা থেকে উপরোক্ত খাবার গুলো বাদ দিলে যেমন আমরা এই মরণ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে পারি তেমনি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমাদেরকে হতে হবে আরো বেশি মনোযোগী।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে ব্রকলি, কমলা লেবু, গ্রিন টি, টমেটো, আপেল, পালং শাক ইত্যাদি ভিটামিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।
এই সকল খাবারে আছে ভিটামিন সি, কে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । এ উপাদান গুলো আমাদের শরীর কে ক্যান্সার প্রতিরোধী করে গড়ে তোলে ।
আজ এই পর্যন্ত। সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
আসসালামু আলাইকুম।
ধন্যবাদ।