মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আদ্যোপান্ত (২য় পর্ব)
এইচএসসি পরীক্ষার পর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের একটা বড়ো অংশেরই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। অনেকেই চায় চিকিৎসক হিসেবে দেশ ও জাতিকে সেবা প্রদান করার এই মহান দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে। সেই লক্ষে প্রস্তুতি নিতে গেলে আমাদের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া থেকেই অনুসরণ করতে হবে কিছু দিকনির্দেশনা।আজকে আমরা বিষয়ভিত্তিক ভাবে সেগুলো নিয়েই কথা বলব—
এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল:
আগের পর্বের লেখাতেই আমরা বলেছি যে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় মোট ২০০ নম্বর থাকে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের উপর। তাই লক্ষ্য যাদের মেডিকেল,তাদের কিন্তু অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ অর্জন করার। এখানে বলে রাখা ভালো, জিপিএ ৫ এবং গোল্ডেন জিপিএ ৫ প্রাপ্তির মধ্যে কিন্তু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মূল্যায়নে কোনো প্রভেদ নেই। তবে যাদের কোনো কারণে এসএসসি অথবা এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ নেই,তাদেরও দুশ্চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। হয়তো তোমরা এ+ প্রাপ্তদের থেকে কয়েকটি নম্বর পিছিয়ে আছো, কিন্তু একটু বেশি পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ই পারে তোমাদেরকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে। প্রতি বছরই কিন্তু দেশসেরা মেডিকেল কলেজগুলোতে অনেকেই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় যাদের এসএসসি বা এইচএসসি তে জিপিএ ৫.০০ ছিল না।
জীববিজ্ঞানেই বাজিমাত:
আমি আগেই বলেছি জীববিজ্ঞানে কিন্তু মোট ৩০ নম্বর বরাদ্দ থাকে এবং বিষয়ভিত্তিক ভাবে এটাই সর্বোচ্চ। জীববিজ্ঞান প্রথম পত্রের জন্য ডঃ মোঃ আবুল হাসান স্যারের বই এবং দ্বিতীয় পত্রের জন্য গাজী আজমল ও গাজী আসমত স্যারের বইগুলিকে অনুসরণ করাই ভালো। এছাড়াও,ইংরেজি মিডিয়াম কিংবা ইংরেজি ভার্সনের শিক্ষার্থীরা ডঃ মোঃ আব্দুল আলিম স্যারের বই অনুসরণ করতে পারো।
জীববিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র অর্থাৎ প্রাণিবিজ্ঞান অংশটিকে অবশ্যই খুব ভালো করে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে দ্বিতীয় পত্রের মানবদেহ সম্পর্কিত অংশ থেকে কিন্তু অনেক প্রশ্ন করা হয়েছে। তাই ভর্তি পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই উচিত রক্ত,শ্বসন,রেচনসহ মানবদেহ সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয়গুলো মাথায় রাখা। যেহেতু বহুনির্বাচনি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়,তাই নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন করা যেতে পারে এমন তথ্যগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।জীববিজ্ঞানের প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলিয়ে খুব সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডার রয়েছে যা একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে একবারে মনে রাখা খুবই কষ্টকর। তাই, জীববিজ্ঞান অংশে ভালো করতে একই তথ্য বারবার পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আর জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র অর্থাৎ উদ্ভিদবিজ্ঞান অংশের কিছু অধ্যায় সম্পূর্ণভাবে মনে না রাখতে পারলেও চলবে। যদি কোন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থী এই বিষয়গুলো মাথায় রাখে, তবে সে সহজেই জীববিজ্ঞান অংশে বরাদ্দ ৩০ এর মধ্যে ২৫-২৬ পেতে পারে। জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন লেখকের বইয়ে একই বিষয়ের বিভিন্ন তথ্য থাকলে অবশ্যই হাসান স্যার এবং আজমল-আসমত স্যারের বইয়ের তথ্য অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে।
সাধারণ জ্ঞানে কেল্লাফতে:
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞান অংশে মাত্র ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকলেও এই বিষয়টিকে কিন্তু অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।এই বিষয়ের ভালো প্রস্তুতিই তোমাকে মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধে অন্যদের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে রাখবে। সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নে সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে প্রতি বছরই কিছু প্রশ্ন করা হয়। তাই একজন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীর উচিত প্রতিদিনের সংবাদপত্র পড়া এবং খেলাধুলা,রাজনীতি, বিশ্ব পরিস্থিতিসহ সব ধরণের বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা রাখা।
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞান অংশে মুক্তিযুদ্ধ,ভাষা আন্দোলন,বাংলাদেশের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত বিষয়গুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলারে সাধারণ জ্ঞান অংশের জন্য শুধুমাত্র “মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস” নির্দিষ্ট করা ছিল। এছাড়া নোবেল বিজয়ীদের তালিকা, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দেশের মুদ্রা ও রাজধানী,আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ঘটনা থেকেও সাধারণ জ্ঞান অংশে প্রশ্ন করা হয়।
সুতরাং,মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমের সাথে পড়াশোনা করতে হবে।
লেখক:শিক্ষার্থী, পাবনা মেডিকেল কলেজ।