হঠাৎ বুকে ব্যথা? হার্ট অ্যাটাক নাকি!!
হঠাৎ করে বুক ব্যথা হয়ে মৃত্যুবরণের সংবাদ অহরহই পাওয়া যায়। বুকে ব্যথা সত্যিই একটি যন্ত্রণাদায়ক এবং কষ্টকর অনুভূতি। এই সমস্যার সাথে অনেকেই কমবেশি পরিচিত। বুকের ব্যথা অনেক স্বাস্থ্যবান ব্যাক্তিকেও পর্যুদস্ত করে ফেলে। তাই কোনো কোনো সময় এটা কারো কাছে আতঙ্কের বিষয়। অনেক কম স্বাস্থ্যসচেতন মানুষও বুকে ব্যথার কথা শুনলে আঁতকে ওঠেন। মনে হয়, এই বুঝি হয়ে গেল হার্ট অ্যাটাক!!
প্রকৃতপক্ষে, অনেক রোগের কারণেই বুকে ব্যথা হতে পারে। আজকাল রেডিও-টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজে হৃদপিণ্ড তথা হার্ট অ্যাটাকের উপর বিভিন্ন লেখালেখির কারণে মানুষ এখন হার্ট নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। আসলে হৃদযন্ত্রের বহু সমস্যায় বুক ব্যথা হতে পারে। অজীর্ণ বা পেট ফেঁপে গ্যাস তৈরি হলেও কিন্তু অনেক সময় বুকে চাপ দিলে হঠাৎ ব্যথা অনুভূত হয় এবং রোগী ভীত হয়ে যায় আর ভাবে এই বুঝি হয়ে গেল হার্ট অ্যাটাক!!
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা দূর্ভাবনা বা বিমর্ষতার কারণেও বুকের বাম পাশে ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের রোগীকে স্নায়ুর চাপ কমানোর জন্য এন্টি ডিপ্রেসেন্ট জাতীয় ঔষধ যেমন: লুডিওমিল বা ক্লোবাজাম জাতীয় ঔষধ প্রয়োগ করলে বেশ ভালো ফল পাওয়া যায়।
তবে প্রকৃত হার্ট অ্যাটাককে কোনো মতেই পেটে গ্যাস বা মানসিক বিষন্নতা বলে ভুলভাবে শনাক্ত করা উচিত নয়। একটা কথা মনে রাখতে হবে, অনেক ক্ষেত্রেই হার্ট অ্যাটাক তার সনাতনী চেহারা নিয়ে নাও ধরা দিতে পারে। কারণ এমনও অনেক রোগী আছেন দাঁতের ব্যথায় চিৎকার করছেন অথচ ইসিজি করে দেখা গেছে হার্টের অবস্থা ততক্ষনে গুরুতর হয়ে গেছে। এজন্যই বুকে ব্যথা করলে চিকিৎসক সাথে সাথে একটি ইসিজি এবং বুকের এক্সরে করানোর পরামর্শ দেন। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ইসিজি বা বুকের এক্সরে করলেও প্রাথমিকভাবে বুকে ব্যথার কারণ ধরা পড়ে না।
আসলে হার্টের ব্যথা যাকে আমরা অ্যানজাইনা বলে থাকি, সেটা সাধারণত বুকের মাঝামাঝি জায়গায় হয়ে থাকে এবং ব্যথা বাম হাতে নেমে আসে। এমনকি চোয়ালেও ছড়িয়ে যেতে পারে। যদি রোগী নাইট্রোগ্লিসারিন বড়ি জিহ্বার নিচে রাখেন তবে ব্যথা সাথে সাথেই কমে যাবে। মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন বা হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা কিন্তু অত্যন্ত তীব্র আকার ধারণ করে। ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, রোগী ঘামতে থাকেন এবং দ্রুত নেতিয়ে পড়েন। অনেক সময় রোগী বমি করেন। ঘটনা এমন দ্রুত ঘটতে থাকে যে, রোগীর আশেপাশের লোকজনও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। সেই অবস্থায় সম্ভব হলে এম্বুলেন্স-এর সাহায্যে যেসব হাসপাতলে করোনারি কেয়ার ইউনিট রয়েছে, সেখানে স্থানান্তরিত করা শ্রেয়। অ্যানজাইনা বা হার্ট অ্যাটাক ছাড়াও ফুসফুসের যে কোনো প্রদাহ এবং নিউমনিয়াতে বুক ব্যথা করে।
ফুসফুসের চারিদিকে যে ঝিল্লীদ্বয় রয়েছে, তার ভেতর বাতাস ঢুকে গিয়েও হঠাৎ তীব্র বুক ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। অবশ্য এ অবস্থায় প্রচন্ড শ্বাসকষ্টও শুরু হয়ে যায়। ফুসফুসে যক্ষ্মা এবং ক্যান্সার হলে রোগীর অন্যতম প্রধান লক্ষণ থাকে এই বুকে ব্যথা। তবে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও কিন্তু বুকে ব্যথা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য বুক ব্যথা রোগের শেষের দিকে এতটাই প্রকট আকার ধারণ করে যে, অনেক শক্তিশালী বেদনানাশক ওষুধ দিয়েও ব্যথা কমানো যায় না। সেক্ষেত্রে রেডিওথেরাপিরও প্রয়োজন হয়। দুর্ঘটনা বা বুকে আঘাত লাগার কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে। ফুসফুসের চারিদিকের ঝিল্লিতে যে কোনো প্রদাহেই বুক ব্যথার সৃষ্টি হয় এবং সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো – রোগ সেরে যাওয়ার পরেও অনেক ক্ষেত্রে এ ব্যথা কমবেশি লেগেই থাকে। বিশেষ করে ফুসফুসের আবরণী ঝিল্লীদ্বয়ের মাঝে পানি জমলে, যাকে আমরা প্লুরাল ইফিউশন বলে থাকি, তাতে রোগী বুকের ব্যথায় ভুগতে থাকে এবং পানি বের করে নিয়মিত ওষুধ খেয়ে সুস্থ হওয়ার পরও ব্যথা লেগেই থাকে। কিন্তু রোগী নিজে নিজে এক্সরে করাতে থাকে এই ভেবে যে, তার রোগ বোধহয় ভালো হয়নি। তবে এই ধরনের রোগীদের ভালোমতো আশ্বস্ত করতে পারলে অবশ্য রোগী প্রকৃত ব্যাপারটা অনুধাবন করতে সক্ষম হয় এবং ব্যথা কমে যায়।
বুক ব্যথার অনেক অনেক কারণ রয়েছে। তাই বুকে ব্যথা করলে তার প্রকৃত কারণ শনাক্ত করার প্রয়োজন। বুকে ব্যথা করলে কিছু ব্যথার ওষুধ বা অ্যান্টাসিড খেয়ে নিলেই কিন্তু চিকিৎসা হয়ে যাবে না। ব্যাপারটিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় এনে একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পরিশেষে, আবারও বলছি, বুকে ব্যথা কোন রোগ নয় বরং অনেক ধরনের হৃদরোগ এবং বক্ষব্যাধির বহিঃপ্রকাশ। তাই কম-বেশি বুকে ব্যথা করলেই, তাকে গুরুত্ব দিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। কারণ অনেক সময় দেখা গেছে, বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকেও বুকে ব্যথা অল্প পরিমাণে হতে পারে। তাই ব্যথার ব্যাপকতা দিয়ে রোগের ব্যাপকতা নির্ণয় করা সব ক্ষেত্রে সম্ভবপর হয় না।
Reference websites:
https://www.medicalnewstoday.com ;
https://www.heart.org/en ; https://upbeat.org/heart-rhythm-disorders