জেনে নিন শ্বেত রোগের কারণ ও চিকিৎসা
মানুষের ত্বকের রঙ স্থান, আবহাওয়া ও বংশ অনুযায়ী বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। শুধুমাত্র শেতাঙ্গরা সুন্দর হয়ে থাকে কিংবা কৃষ্ণাঙ্গদের চোখে মায়া বেশি হয়ে থাকে এমন কোনো কথা নেই। সৃষ্টি জগতের সকল কিছু স্রষ্টা নিজেই বানিয়ে থাকেন বলে সব বর্ণই সুন্দর হয়। কিন্তু কেমন লাগে যখন এই সুন্দর রঙের ত্বক ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়? শ্বেতরোগ এমনি একটি রোগ যা নারী পুরুষ সব মানুষেরই হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অংশে সাদা সাদা ছোপ পড়ে যায়। আর তাই একে শ্বেত রোগ বলে৷
শ্বেত রোগের কারণ-
আমাদের মস্তিষ্ককে মানবদেহের কম্পিউটার বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ মস্তিষ্ক মানবদেহের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এই নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে যখন কোনো প্রকার ক্রুটি দেখা যায় তখন মানবদেহও বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যায়,এছাড়াও রয়েছে হরমোন। এই হরমোন শরীরের অনেক কাজ করে থাকে৷ মেলানোসাইট নামক হরমোন মানবদেহের ত্বকের রঙের কারণ হয়ে থাকে। শরীরের কোনো বিশেষ স্থানের ত্বকের রঙ উৎপাদনকারী কোষ বা মেলানোসাইট রোগাক্রান্ত হলে বা সংখ্যায় কমে গেলে অথবা মরে গেলে মেলানিন নামক ত্বকের রঞ্জক পদার্থ তৈরি বন্ধ হয়ে যায় এবং ঐ নির্দিষ্ট স্থান বর্ণহীন হয়ে পড়ে অর্থাৎ সাদা দাগ পড়ে যায়।
এটি একটি রোগ হলেও মোটেও ছোঁয়াচে নয়। শ্বেত রোগীর সাথে মেলামেশা করা যায় এতে শ্বেত রোগ নিজের হওয়ার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। এই রোগটি প্রাণঘাতিও না। তাই ভয়ের কিছু নেই।
এই রোগের চিকিৎসা নিয়ে অনেক কথা উঠে থাকে। কেননা এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। সময়সাপেক্ষ এমনকি পুরোপুরি নাও সারতে পারে। লোমশ অংশের চিকিৎসা ঠিক মতো হলেও যেখানে লোম নেই সেখানে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন। আবার অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পরেও অনেকের ত্বক ঠিক হয়ে যায় না। পরবর্তীতে লেজার ট্রিটমেন্ট দেওয়া লাগে। আমরা জানি লেজার রশ্মি মানুষের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে। কখনো কখনো ত্বক প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন হয়। এর কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-
*ঔষধের ক্ষেত্রে-
রিভফ্লাভিন ট্যাবলেট
মেলাডিনিন
টেক্রলিমাস কিংবা পাইমেক্রুলিমাস মলম
কেকসিপট্রিন মলম
ক্লোভেট
করটিকো স্টেরয়েড জাতীয় মলম (বিভিন্ন মাত্রার)
ভিটামিন বি জাতীয় খাদ্য
ছোলা বুট
*ফোটোথেরাপি বা লেজারের ক্ষেত্রে-
এন বি আল্ট্রাভায়োলেট
পুভা
লেজার
উক্ত থেরাপিগুলো এককভাবে না হলেও অন্যান্য চিকিৎসার সাথে প্রয়োগ করা হয়।
*কসমেটিক সার্জারির ক্ষেত্রে-
ইপিভার্মাল গ্রাফটিং
অটোলগাস মিনিগ্রাফট
ট্রান্সপ্লান্টেশন অব কালচার্ড আর নন কালচার্ড মেলানোসাইট ইত্যাদি।
এই রোগটি আসলে মরণঘাতী নয় কিন্তু শরীরের একটি সমস্যা তো বটেই। আর শরীরের যেকোনো সমস্যায় সমাধান করা অতি আবশ্যক। তবে শ্বেত রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় চিকিৎসা সফল হয়ে থাকে না। বিধায় সারাজীবন তাকে এই সমস্যাটি বহন করে চলতে হয়। এই রোগের কোনো প্রতিরোধ নেই কেননা মস্তিষ্কের কোনো হরমোন কিংবা কোষকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অধিকার আমাদের নেই। আবার লেজার রশ্নি কিংবা প্লাস্টিক সার্জারি করে হয়তো ত্বকের এই উদ্ভট পরিবর্তন লোক চক্ষুর আড়াল করা যায় কিন্তু রোগকে থামানো যায় না।
আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন।