কোষ্ঠকাঠিন্য : কিছু নিয়ম মেনে চলুন

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে কোষ্ঠকাঠিন্যের হার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য বিশেষ অর্থে কোনো রোগ নয়। যখন কারো শক্ত পায়খানা হয় কিংবা দুই অথবা তারও বেশি দিন পায়খানা হয়না তখন সেই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। একটি দীর্ঘ সময় ধরে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। পৌষ্টিক নালীর মধ্যে দিয়ে খাদ্যের অপাচ্য অংশ ধীরে ধীরে গমন করার সময় যদি মল থেকে বেশি পরিমাণে পানি শোষিত হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যেতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য একদিনের ব্যবধানে কখনোই হয় না বরং একটি দীর্ঘ সময়ের অভ্যাস ও খাদ্যাভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সৃষ্টি করে।


 এই অভ্যাস গুলি নিম্নরূপ :

১.পায়খানার বেগ পেলে পায়খানায় না যাওয়া।

২. পায়খানা ধরে রাখা।

৩.রাফেজ বা আঁশ যুক্ত খাবার না খাওয়া।

৪. অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া।

৫.অলসতা,পরিশ্রম না করা।

৬. ব্যায়ামের অভ্যাস না থাকা ইত্যাদি

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সচরাচর পঞ্চাশোর্ধ বয়সের লোকেদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি দেখা যায়।

তবে ভয়ের ব্যাপার এটি যে, কর্মব্যস্ত জীবনে বাবা-মার অসচেতনতা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, খাবারের প্রতি অনীহা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে শিশুরা অথবা কিশোররাও কোষ্ঠকাঠিন্যের মত ভয়াবহতায় আক্রান্ত হতে পারে।

প্রথমদিকে কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ গুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে প্রথমদিকে মলত্যাগ কষ্টদায়ক হয়। এক পর্যায় পেটে অস্বস্তিকর অবস্থা পেট ব্যথা এবং নানারকম আনুষাঙ্গিক অসুবিধার সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে হার্নিয়া সহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

বৈজ্ঞানিকভাবে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ :

আমাদের পরিপাকতন্ত্রে বৃহদন্ত্র নামের একটি অংশ রয়েছে। যেখানে খাদ্যের অপাচ্য অংশ থেকে অতি মাত্রায় পানি শোষিত হয়। যদি কোনো কারণে দীর্ঘ সময় সেই মল অথবা অপাচ্য অংশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে তাহলেই কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবার  উপায়

পঞ্চাশোর্ধ বয়সে যখন কেউ কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয় তখন তার জীবন বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে। কর্মময় সারাটা জীবন শেষে একজন মানুষ স্বভাবতই চায় সে বাকি জীবনটা স্বাচ্ছন্দে কাটাতে। কিন্তু কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত ব্যক্তির ভাগ্যে হয়তোবা সেটা নাও থাকতে পারে। তবে কি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবার কোন উপায় নেই?

হ্যাঁ অবশ্যই রয়েছে। কোষ্ঠকাঠিন্য যেহেতু বিশেষ ধরনের কোনো রোগ নয় সুতরাং ওষুধের মাধ্যমে এটিকে সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা যাবে না। তবে কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত ব্যক্তির স্বভাব, খাদ্যাভাস লাইফস্টাইল ইত্যাদি পরিবর্তন করতে হবে।

১.প্রথমত প্রচুর পরিমাণে ব্যায়াম, হাঁটাচলা ইত্যাদির ভেতর থাকতে হবে। প্রশ্ন আসতে পারে যে, ষাটোর্ধ্ব বয়সে অথবা পঞ্চাশোর্ধ বয়সে একজন মানুষের হাঁটাচলা অথবা শারীরিক শ্রম করা সম্ভব নাও হতে পারে। বিশেষ করে স্ট্রোক, প্যারালাইসিস অথবা এই ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হবে, নিজের অবস্থান থেকে চেষ্টা করুন। যতটুকু পারেন আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী আপনি শারীরিক পরিশ্রম চালিয়ে যান

২.খাদ্যতালিকায় রাফেজ অথবা আঁশযুক্ত খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে :সজনে ডাটা, শাকসবজি, বিভিন্ন উদ্ভিদের গ্রহণযোগ্য ডাটা বা কান্ড ইত্যাদি ।

৩.পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে ফল যেমন: আপেল, নারকেল, খেজুর, আম, কমলা, পেঁপে আনারস, কলা ইত্যাদি আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যোগ করুন সামর্থ্য এবং ঋতু বৈচিত্রের ওপর ভিত্তি করে ফলগুলো নির্বাচন করুন।

কোষ্ঠকাঠিন্য তে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি বিশেষ সতর্কবার্তা :

যদি আপনি কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তাহলে শরীরের মধ্যে অস্বস্তি বোধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে নিয়মিত মলত্যাগের  জন্য অনেকেই প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ওষুধ সেবন করে থাকি। তবে এইটা কখনই করা উচিত নয়। কারণ যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা যেসকল ওষুধগুলো সেবন করে থাকে সেই সকল ওষুধের অধিকাংশ ওষুধে বিভিন্ন উত্তেজক পদার্থ থাকে যা স্ট্রোক, প্যারালাইসিস সহ ক্যান্সারের মতো মারাত্মক ব্যাধির জন্ম দিতে পারে। শুধু ওষুধের ওপর ভরসা করে চলাটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ঔষধ নয়, নিজের স্বভাব, খাদ্যাভাস এবং লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করুন। তাহলে দেখবেন ওষুধের চেয়ে বেশি এবং কার্যকর ফল পেতে পারেন।

 

Similar Posts