চট্টগ্রামের ফয়েজ লেক
সবুজের ঘেরা গাছপালার পাহাড় আর টলমলে পানির লেক ফয়েজ লেক
জায়গার বর্ণনাঃ প্রাকৃতিক অনন্য সৌন্দর্য্যের অধিকারী সবুজ পাহাড়ে ঘেরা ফয়েজ লেক (ইংরেজি: Foy’s Lake) চট্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট থেকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত। লেকটি ১৯৪২ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার ফয়েস ৩৩৬ একর জায়গায় জুড়ে খনন করেছিল রেল কলোনিতে বসবাসকারী লোকদের কাছে পানি পৌঁছানোতে। দীর্ঘ সময় অযত্নে পড়ে থাকায় একসময় জৌলুশ হারাতে বসে প্রাচীন এই লেক। ফয়’স লেকের প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২০০৫ সালে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও রিসোর্ট।
![](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2018/11/429651_10150640888968955_2020428248_n.jpg)
বিনোদনের জন্য থিম পার্ক ফয়’স লেক কনকর্ড, অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডে আছে বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক মানের রাইডস যেমন- সার্কাস সুইং, বাম্পার কার, বাম্পার বোট, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, জায়ান্ট ফেরিস হুইল, ড্রাই স্লাইড, ফ্যামিলি ট্রেইন, প্যাডেল বোট, ফ্লোটিং ওয়াটার প্লে, পাইরেট শিপ এবং ভিডিও গেমসহ বিভিন্ন ধরনের স্পোর্টস। এখান থেকে উপরে টিলায় আছে বনভোজন কেন্দ্র। সেখান থেকে আরেকটি টিলার উপরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এই জায়গাটি থেকে চট্টগ্রাম শহরের বার্ডস আই ভিউ দেখা যায়।
![](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2018/11/amusement_park3.jpg)
অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডের উত্তরে টিলার উপরে মূল ফয়’স লেক। লেকের দুইপাশে সবুজে ঘেরা আসমানী, গগনদ্বীপ, জলটুঙ্গি নামের উঁচু উঁচু পাহাড় এবং অঞ্চলের চারদিকে অরুনাময়ী, গোধূলী, আকাশমনি, মন্দাকিনী, দক্ষিনী, অলকানন্দা নামের হৃদ। এসব পাহাড়েরর আছে সংরক্ষিত বন, সে বনে খেলা করে চিত্রা হরিণ, খরগোশ আরো কিছু বন্যপ্রাণী এবং হৃদের পাড়ে দেখা মিলবে সারি সারি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, স্পিড বোট আর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান। যেগুলো দিয়ে আপনি আধা ঘণ্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদে লেকে ভ্রমণ করতে পারবেন। লেকের ওপর আছে ঝুলন্ত সেতু, পাহাড়ের বনাঞ্চলে ট্রাকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সুউচ্চ টাওয়ার।
শেষ প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে পানির রাজ্যে রোমাঞ্চকর জায়গা ‘সী ওয়ার্ল্ড’ যাকে বলা হয় ফয়েজ লেকের একটি জল থিম পার্ক। যার মধ্যে রয়েছে স্লাইড ওয়ার্ল্ড, ফ্যামিলি ওয়ার্ল্ড, মাল্টি স্লাইড, ড্রাই স্লাইড, ড্যান্সিং জোন, ওয়েভ পুলস, ওপেন শাওয়ার ইত্যাদি। জলক্রীড়ার পাশাপাশি শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য ডলফিন, কচ্ছপ, শীলমাছসহ বেশ কিছু প্রাণিও রয়েছে।
![সী ওয়ার্ল্ড চট্টগ্রাম](https://banglavibe.com/wp-content/uploads/2018/11/IMG_0634-1024x683.jpg)
প্রকৃতির মাঝে নির্জনতায় অবকাশ যাপনের জন্য সি-ওয়ার্ল্ডের পাশেই গড়ে তুলা হয়েছে বেশ কিছু রিসোর্ট। রিসোর্টেও যেতে হয় নৌকায় চড়ে। লেক ও পাহাড়মূখী দু ধরণের ঘরই পাবেন এখানে। রিসোর্টে রয়েছে সিঙ্গেল বেড, ফ্যামেলি বেড, কাপল বেড। সাথে রয়েছে মানসম্মত খাবারের সুব্যবস্থা। বারান্দায় বসে লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের ব্যবস্থা আছে এখানে। অনেকেই মনে করেন মধুচন্দ্রিমার জন্যও এখানকার রিসোর্ট আকর্ষণীয় জায়গা।
টিকেটঃ
কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট ওয়ার্ল্ডে প্রবেশসহ সব রাইড ৪০০ টাকা। (অনেক সময় offer থাকতে পারে)
ওয়াটার পার্ক সি ওয়ার্ল্ড কনকর্ড প্রবেশসহ সব রাইড ৫০০ টাকা। (অনেক সময় offer থাকতে পারে)
খোলার সময়ঃ সকাল ১০টা ৩০ মিনিট
বন্ধের সময়ঃ শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার ও শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত
কখন যাবেনঃ সারা বছর যাওয়ার উপযুক্ত সময়। একদিনের প্ল্যান থাকলে সকাল বেলা চলে যাওয়াই ভালো। পাহাড়ে উঠবেন সন্ধার আগে তাহেলে সেখানে রাখা বিশাল আকৃতির বাইনোকুলারের সাহায্যে সাগরিকা সমুদ্র সৈকত , শহর, ক্রিকেট স্টেডিয়াম সহ অনেক কিছু।
হোটেল-মোটেলঃ
ফয়েস লেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আপনার জন্য আছে বিলাসবহুল থাকার ব্যবস্থা। পাহাড়ের কাছে ও লেকের পাড়ে রয়েছে দারুন সব কটেজ ও রিসোর্ট। নবদম্পতিদের জন্য রয়েছে হানিমুন কটেজ। ফয়েস লেক রিসোর্টে প্রতিদিন রাত্রিযাপন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা মাত্র।
এছাড়া চট্টগ্রামে নানান মানের হোটেল আছে। নীচে কয়েকটি বাজেট হোটেলে নাম ঠিকানা দেয়া হলো। বিস্থারিত (ইন্ট্রারনাল লিংক/এক্সট্রানাল লিংক)
১. হোটেল প্যারামাউন্ট, নুতন ট্রেন স্টেশনের ঠিক বিপরীতে, চট্টগ্রাম; যোগাযোগঃ ০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪
২. হোটেল এশিয়ান এসআর, স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম; যোগাযোগঃ ০১৭১১-৮৮৯৫৫৫
৩. হোটেল সাফিনা, এনায়েত বাজার, চট্টগ্রাম; যোগাযোগঃ-০৩১-০৬১৪০০৪
৪. হোটেল নাবা ইন, রোড ৫, প্লট-৬০, ও,আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম; যোগাযোগঃ ০১৭৫৫ ৫৬৪৩৮২
৫. হোটেল ল্যান্ডমার্ক, ৩০৭২ শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম; যোগাযোগঃ ০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭
কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে, আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ৮কিমি দূরে অবস্থিত অপরূপা ফয়স লেক।
অন্য শহর থেকেঃ দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দ মত বাসে এসে চট্টগ্রাম শহরে এ কে খানে নামবেন এবং সেখান থেকে সি এন জি বা রিক্সা যোগে চলে যাবেন ফয়স লেকে।
নদী পথেঃ
বরিশাল, খুলনা পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার সাথে চট্টগ্রামের রয়েছে লঞ্চ/ইস্টিমার সার্ভিস। সুতরাং আপনি নদী পথে ও চট্টগ্রাম আসতে পারেন।
রেলওয়েঃ
ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কুলিল্লা, চান্দপুর, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া সিলেট থেকে ও ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।
চট্রগ্রাম শহরের জিইসি মোড় বা এ.কে.খান থেকে সিএনজিতে ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা নিবে। রিক্সায় নিবে ৪০-৫০ টাকা।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারেন্ট এবং তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট (https://www.foyslake.com)