দেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়

ছাত্রজীবন পার হয় মূলত তিনটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে, তা হলো বিদ্যালয়,মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়। এদেশের ইতিহাস ঘাটলে বুঝা যায় যে,  আগে শুধু রাজা-বাদশাহ, জমিদার ও ধনী বণিকের ছেলেপুলেরাই পড়াশোনা করতো তবুও তা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয়,বাড়িতে শিক্ষাগুরু নিযুক্ত করে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাদীক্ষা এদেশে ইংরেজরাই প্রণয়ন করে। আজ ব্রিটিশ আমলের সেই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরব যেসব প্রতিষ্ঠান আজও দাড়িয়ে আছে এবং শিক্ষার মহান আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে এদেশের জনগনের মাঝে।

the-oldest-schools-and-colleges-of-bangladesh

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল

প্রতিষ্ঠাকাল ১৮২৮ সালে। এটি দেশের প্রাচীনতম বিদ্যালয়। লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম ছিল বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মূলত ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য। এটি একটি অবৈতনিক প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৮৫০ সালে এক টাকা বেতনে শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। ১৮৭৩ সালে এই স্কুলের নতুন নামকরণ করে রাখা হয় কলেজিয়েট স্কুল। এভাবেই এদেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।

পেগোজ স্কুল

প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৪৮ সালে। প্রতিষ্ঠাতা নিকোলাস পেগোজ। নিজের নামেই এই স্কুলটি যার বর্তমান নাম পেগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ। এটি ঢাকা শহরের সদরঘাট এলাকায় অবস্থিত এবং দেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যালয়। ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ এই স্কুলটি পরিদর্শনে আসেন। কবি শামসুর রাহমান,কায়কোবাদ এই স্কুলে পড়েছেন।

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল

প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৩৫ সালে। প্রতিষ্ঠা করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। এটিই ছিল এদেশের প্রথম সরকারি স্কুল। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল ঢাকা ইংলিশ সেমিনারী। এই স্কুল প্রতিষ্ঠার মূল কারণ ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষা। প্রথমদিকে বেশ কিছু বছর ইউরোপীয় দের নিয়েই এই বিদ্যালয় পরিচালিত হয়। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।

কুমিল্লা জিলা স্কুল

প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৩৭ সালে। প্রতিষ্ঠাতা এইচ জি লেজিস্টার। তিনি একজন ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। এটি প্রথমে সরকারি ছিল না। পরে ইংরেজ সরকার ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য এটিকে সরকারি ঘোষণা করেন এবং এই স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নের করেন। এটি একটি বিশেষ স্কুল যার মধ্যে হাউজিং সিস্টেম আছে। হাউজিং সিস্টেম হলো প্রত্যেক বছর বিভিন্ন হাউজের মধ্যে পড়াশোনা ও খেলাধুলায় বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা হবে। এই স্কুলে মোট চারটি হাউজ আছে। বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ শচিন দেব বর্মণ এই স্কুলের বিদ্যার্থী ছিলেন।

ঢাকা কলেজ

প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৪১ সালে। এটি এই উপমহাদেশের এক ঐতিহ্যবাহী মহাবিদ্যালয় যা ইতিহাসের সাক্ষী,যার মাধ্যমে এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় এসেছিল আধুনিকায়ন যেখানে ইংরেজি সাহিত্য, পাশ্চাত্যের কলাকৌশল, দর্শন সহ আরো নানান বিষয়ে শিক্ষাদীক্ষা দেয়া হতো। সূচনালগ্নে এটি স্থাপিত হয় বুড়িগঙ্গার তীরে। তখন এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। বিখ্যাত কার্জন হল এই ঢাকা কলেজের জন্যই নির্মিত হয় প্রথমে পরে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।

ইডেন মহিলা কলেজ

এদেশের প্রথম নারীশিক্ষাকে জাগ্রত করে ইডেন মহিলা কলেজ। প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৭৩ সালে ঢাকার ফরাশগঞ্জে। বর্তমানে এটি আজিমপুরে অবস্থিত। এই মহাবিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ব্রাহ্মণ সমাজের মেয়েদের নিয়ে। শুরুতে ১১ জন ছাত্রী নিয়ে চালু হয় এর কার্যক্রম এবং এই শতকের শেষদিকে তা বেড়ে দাড়ায় ১৬০ জনে। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায় সেই সময়ের সরকারের কাছ থেকে।

চট্টগ্রাম কলেজ

ঢাকা কলেজের পরেই এদেশের উচ্চশিক্ষায় ভূমিকা রাখে চট্টগ্রাম কলেজ। এর প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৩৬ সালে। শুরুতে এটি ছিল চট্টগ্রাম জেলা স্কুল পরে ১৮৬৯ সালে একে চট্টগ্রাম মহাবিদ্যালয় তে উন্নীত করা হয়। এই মহাবিদ্যালয় কে স্বীকৃতি দেয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এখনে উচ্চ পর্যায়ের দর্শন ও কলা নিয়ে পাঠদান চলতো। নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।

রাজশাহী কলেজ

এটি বাংলার তৃতীয় প্রাচীনতম মহাবিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৭৩ সালে এবং এই মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জমি ও অর্থ সহযোগীতা দেন সেসময়ের রাজা রায় বাহাদুর হরলাল রায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্ববাংলা ও উত্তরবঙ্গের শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে এই মহাবিদ্যালয়।

ব্রজমোহন কলেজ

প্রতিষ্ঠানকাল ১৮৮৯ সালে এবং প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তৎকালীন বিশিষ্ট সমাজসেবক অশ্বিনীকুমার দত্ত। এটি বরিশাল শহরে অবস্থিত। এটি শিক্ষাদীক্ষায় এতটাই উন্নতি করেছিল যে তা দক্ষিণ বাংলার অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত ছিল। বঙ্গভঙ্গ রদে এই কলেজের ছাত্ররা বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিখ্যাত কবি জীবনানন্দ দাস এই কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

 

 

Similar Posts