উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য যেসব খাবার খাওয়া আবশ্যক
উচ্চতা বৃদ্ধিকারী খাবার এখন সব জায়গায় আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে বেশিরভাগ অল্প বয়স্ক বাচ্চার উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় কম। পিতা বা মাতা হিসাবে, আমরা সবসময়ই আমাদের সন্তানের সঠিক উচ্চতায় বেড়ে ওঠা এবং সঠিক ওজন নিয়ে চিন্তাভাবনা করি। আমরা কখনই আমাদের সন্তানকে স্থূল বা খাটো হোক তা চাই না। উচ্চতা বৃদ্ধিতে সঠিক খাদ্যাভাসে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য খাদ্য হল শক্তির প্রাথমিক উৎস। সঠিক খাবার এবং ডায়েট আপনাকে কেবল ফিট এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে না, আপনাকে আরও লম্বা হতেও সাহায্য করবে।
বিপরীতে, প্রচুর জাঙ্ক ফুড খাওয়া আপনার শিশুর ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং উচ্চতা বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। এই আর্টিকেলে আপনার সাথে খাবারের একটি তালিকা শেয়ার করব যা কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উচ্চতা দ্রুত বাড়ায়।
উচ্চতা বাড়াতে সাহায্যকারী খাদ্যের তালিকাঃ
নীচে দেওয়া সেরা খাবারগুলি একদিকে যেমন উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, আবার এই খাদ্য থেকে পাওয়া পুষ্টি এবং প্রোটিনগুলি আপনার বাচ্চা শক্তিশালী শরীরের অধিকারী করে গড়ে তুলবে।
১) দুধঃ
সন্দেহ নেই, বাচ্চাদের উচ্চতা বাড়াতে দুধই সেরা খাবার। দুধ হল ক্যালসিয়ামের মতো পুষ্টির প্রাথমিক উৎস যা আপনার দেহের হাড় তৈরির মূল উপাদান। প্রয়োজনীয় প্রোটিনের সরবরাহের পাশাপাশি, হাড়ের উন্নয়ন ও হাড় শক্তিশালীকরণে কাজে দুধের ভূমিকা অপরিসীম।
২) চিকেন বা মুরগির মাংসঃ
চিকেন হল প্রাণীজ আমিষের অন্যতম প্রধান উৎস যা আপনাকে কেবল উচ্চতা বৃদ্ধিই নয়, আপনার শরীরের সামষ্টিক উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে। অন্য যে কোনও প্রাণীর মাংসের চেয়ে মুরগি মাংস পেতে পারেন সেরা মানের প্রোটিন। উচ্চতা বাড়াতে এর বিকল্প নেই বললেই চলে।
৩) ডিম:
মুরগির মাংসের পরের সেরা জিনিসটি হল ডিম। ডিম আপনাকে লম্বা এবং শক্তিশালী হতে সহায়তা করবে। এক গ্লাস দুধের সাথে একটি সিদ্ধ ডিম হতে পারে আপনার জন্য সেরা ব্রেকফাস্ট। ডিমে আছে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং রিবোফ্ল্যাবিন। ডিমে থাকা উচ্চমাত্রার প্রোটিন উপাদান হাড়ের উন্নয়ন ও হাড়কে শক্তিশালীকরণে কাজ করে। লম্বা হতে চাইলে আপনি ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ ডিমের উপর নির্ভর করতে পারেন। ডিম উচ্চতা বাড়াতে সেরা এবং সবচেয়ে শক্তিশালী খাবার। সুতরাং উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য আপনার ডায়েট থেকে ডিম বাদ দিবেন না।
৪) গরুর মাংসঃ
গরুর মাংস খাবারে আরও একটি সুপরিচিত উচ্চতা বৃদ্ধিকারক খাবার। সাধারণত লাল মাংস শরীরের মেদ নয়, শরীরের শক্তি অর্জনে সহায়তা করে। গরুর মাংস দেহ গঠনের প্রয়োজনীয় উপাদান এবং পুষ্টিগুলিতে সমৃদ্ধ হয় যা শরীরের প্রয়োজনীয় বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যক।
৫) সয়াবিন বা সয়াবড়িঃ
প্রাকৃতিকভাবে উচ্চতা বাড়াতে সয়াবিন হল একটি অনন্য খাদ্য। সাধারণত, সয়াবিন বা সয়াবড়ি থেকে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন পাওয়া যায় যা ছোট ছোট টুকরো করে রান্না করলে তরকারিতে আসে এক অনন্য স্বাদ। তবে এটি কেবল স্বাদ দেয় না, এটি ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণ করে উচ্চতা বৃদ্ধি ও বডি বিল্ডিং এ সাহায্যও করে থাকে। সয়াবিনে যে প্রোটিন থাকে তা হাড় এবং টিস্যুর ঘনত্ব বাড়ায়। যা শিশুদের বৃদ্ধির জন্যও জরুরি। নিয়মিতভাবে খেলে আপনার হাড়ের আকার ভালো থাকবে এবং স্বাস্থ্যকর উন্নয়ন হবে। প্রতিদিন অন্তত ৫০ গ্রাম সয়াবিন খেতে হবে। এটিকে একটি সুপারফুড বলা যেতে পারে যা প্রোটিন সমৃদ্ধ এবংপ্রায় চর্বিহীন। নিরামিষাশীদের যাঁরা উচ্চতা বাড়াতে মাংস, ডিম বা মুরগি খেতে পারেন না তাদের পক্ষে এটি দূর্দান্ত বিকল্প।
৬) সবুজ সবজিঃ
সবুজ শাক-সবজিতে থাকে প্রচুর খাদ্য আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টি যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এছাড়া দেহের গ্রোথ হরমোন নিঃসরণে উদ্দীপনাও যোগায়। ফলে উচ্চতা বৃদ্ধিতে মোক্ষম হাতিয়ার হল সবজি।
নিম্নে কিছু সবজির গুনাগুণ তুলে ধরা হলঃ
★ প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিকভাবেই উচ্চতা বাড়াতে সিমের কোন জুড়ি নাই। সিমে থাকে প্রচুর ভিটামিন এবং প্রোটিন যা আপনার উচ্চতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান ভুমিকা পালন করে।
★ ব্রোকলিতে থাকে ভিটামিন সি, আঁশ এবং আয়রন। এটি দেহের কার্যক্রম ঠিক রাখতে এবং দৈহিক বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
★ গাজর আমাদের সকলের সুপরিচিত একটি খাবার। গাজর কাচা এবং রান্না করে উভয় ভাবেই খাওয়া যায়। এই খাবারটি ভিটামিন এ এবং সি সমৃদ্ধ এবং হাড়ে ক্যালসিয়াম সংরক্ষণ এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন অন্তত ৩টি করে গাজর খেলে দেহের উচ্চতা বাড়ে।
৭) দানাদার জাতীয় খাদ্যঃ
দানাদার জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহের পুষ্টির অভাব পূরন এবং ভারসাম্য বিধানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে। যেমনঃ
★ ডাল বা মটরশুটি ভিটামিন এবং খনিজ পুষ্টিতে সমৃদ্ধ । এটিতে উচ্চতা বৃদ্ধির হরমোনও আছে।
★ শালগমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পুষ্টি এবং খাদ্য আঁশ।
★বাদাম উচ্চ পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। এতে যে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যামাইনো এসিড থাকে তা দেহের টিস্যু মেরামত এবং নতুন হাড় ও মাংসপেশির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে উচ্চতাও বাড়ে।
★ কুমড়ো বীজ ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ একটি খাদ্য, যা হাড় ও দাঁতের গঠনের জন্য খুবই জরুরি। এতে আরও আছে অ্যামাইনো এসিড যা উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
৮) ফলমূলাদিঃ
বিভিন্ন ধরনের ফল যেমন কলা, কমলা, পেপে, আম, কাঠাল ইত্যাদিতে আছে ভিটামিন, পটাশিয়াম, আঁশ এবং ফোলেট। এই সবগুলো উপাদান হাড়ের বৃদ্ধি এবং উচ্চতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।
৯) মাছঃ
কিশোর-কিশোরীদের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মাছ অন্যতম স্বাদযুক্ত এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। সালমন, টুনা ইত্যাদি মাছ যথাযথ পরিমানে গ্রহণ করলে আপনি আপনার উচ্চতা বাড়াতে সফল হবেন। সুস্বাদু হওয়া ছাড়াও সামুদ্রিক মাছ বেশ স্বাস্থ্যকর এবং এটি প্রমাণিত হয়েছে যে মাছ উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।এটি উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সেরা খাবারগুলির মধ্যে একটি।
আজ আর নয়। সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
আসসালামু আলাইকুম।
Ref: https://www.gilmorehealth.com/what-foods-can-help-you-grow-taller/
ধন্যবাদ
খুব ভাল একটি পোস্ট হয়েছে। অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। ভাইয়া, এই ধরনের আরও লেখা চায়