মাথা ব্যথা : কারণ, প্রকার ও প্রতিকার ।। পর্ব-১
আপাত দৃষ্টিতে মাথাধরা বা মাথা ব্যাথাকে সবাই হালকা ভাবে নিয়ে অভ্যস্ত । কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এতটাও হালকা নয়। মাথা ধরা এমন এক সাধারণ উপসর্গ যাতে পৃথিবীর সবাই অল্প-বিস্তর ভুগে থাকেন।
চিকিৎসা শাস্ত্রের সমস্যা গুলোর মধ্যে মাথাধরা বা Headache এমন একটি উপসর্গ যা হর হামেশাই আমাদের বিব্রত করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারণটা মামুলি হলেও কখনও কখনও এর পেছনে থাকে মারাত্মক ব্যাধির হাতছানি। এই কারণেই মাথা ধরা রোগটাকে হালকাভাবে নেয়া কোনমতেই উচিৎ নয়।
মাথার সব অংশে কিন্তু ব্যথা হয় না। তাই আমাদের জানা উচিৎ মাথার কোন কোন অংশে ব্যথা হতে পারে, যাতে দৈনন্দিন জীবনে আমরা মাথা ধরার ব্যাপারে যত্নশীল হতে পারি। মাথার ব্যথা অনুভুতি সম্পন্ন অংশগুলোর মধ্যে রয়েছে – খুলির আবরণ ও ধমনী সমূহ; পঞ্চম, নবম ও দ্বাদশ করোটি স্নায়ু ( Cranial Nerve); মস্তিষ্কের বিশুদ্ধ ও দূষিত রক্তবাহী নালিগুলো।
এছাড়া ব্যথা বিহীন অংশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – খুলির হাড়; মস্তিষ্কের মূল উপাদান (Parenchyna of Brain); মস্তিষ্কের ভেতরের ও মধ্যের আবরণ দ্বয় ( Pia and Arachnoid Matter); বাইরের আবরণের (Dura Matter) অধিকাংশ।
ঠিক কি কি কারণে মাথা ধরে?
১। মূল রোগাক্রান্ত অঙ্গে ব্যথা অনুভূত না হয়ে যদি মাথায় ব্যথা হয় তাহলে তা হবে পরোক্ষ মাথাধরা। এই প্রক্রিয়ায় চোখ, সাইনাস, কান, নাক, দাঁত ও মেরুদণ্ডে রোগ হলে মাথা ধরতে পারে।
২। দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত ঘটলে চোখে দেখার যেমন অসুবিধা হয় তেমনি মাথাও ধরে। মাথার সামনে, দুপার্শ্বে, পেছনে অথবা যে কোন জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেকের ধারণা, চোখের অসুবিধা থাকে কেবল মাথার পেছনে ব্যথা হয়, সেটা ঠিক নয়। কণিকার প্রদাহ, গ্লুকোমা ধরনের চোখের রোগ হলে, চোখের ব্যাথার সাথে মাথাও ধরে।
৩। আমাদের খুলির হাড়ের মধ্যে কতগুলো ফাঁকা জায়গা (Frontal, Maxillary, Ethmoid, Sphenoid) আছে, যেখানে প্রদাহ হলে মাথা ধরতে পারে। সাইনাসের প্রদাহ যখন তীব্র হয় তখন জ্বর, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং গা ম্যাজ ম্যাজ করা সাথে মাথাও ধরে। কান পাকা (Acute Suppurative Otisis Media), মাস্টটয়েডের প্রদাহ (Acute Mastoiditis), টনসিলের প্রদাহ (Acute Tonsillitis), দাঁতের প্রদাহ – এসব কারণেও মাথা ধরে।
৪। মাইগ্রেন স্বভাবত মাথার একদিকে ধরে। এতে বারবার মাথা ধরার আক্রমণ হয় এবং তার সাথে চোখের প্রদাহ তো আছেই। পরিপাক তন্ত্রের অসুবিধার মধ্যে বমি উল্লেখযোগ্য। মৃদু ব্যথা থেকে শুরু করে অসহ্য তীব্র মাথাব্যথা হতে পারে এবং তার সাথে মাথা ঘুরানো উপসর্গও থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগের সূচনা হয় এবং মহিলাদেরই এতে বেশি আক্রান্ত হতে দেখা যায়। পরিবারের পূর্বপুরুষদের মধ্যে কারো এই রোগ থাকলে পরবর্তী সদস্যদের মধ্যেও এ রোগের সন্ধান পাওয়া যায়। যেকোনো দুটি আক্রমণের মাঝখানে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ থাকে। ভাবাবেগের অতিশয্য, মানসিক দুশ্চিন্তা, চোখের দৃষ্টি শক্তির অসুবিধা এই রোগের কারণ।
৫। এরপরে আসে মানসিক কারণে উদ্ভূত মাথা ধরার কথা। নিছক মানসিক কারণে যে আমাদের মাথা ধরতে পারে এটা আমরা অনেকেই জানিনা। আধুনিক জগৎ ও জীবনের ক্রমবর্ধমান জটিলতা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মাথাধরা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশাভঙ্গ ও ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ডাক্তারি পরীক্ষা করে এই ধরনের মাথা ধরার প্রত্যক্ষ কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।
Reference Book: Headache (Vol-97, 1st Edi.) – Giuseppi Nappi & Michael Moskowitz.