জিম ব্রাদার্স: দুই জমজ ভাইয়ের অবিশ্বাস্য কাহিনী
পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কোন না কোন এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যার কোন কুল কিনারা মানুষের মতো উর্বর-মস্তিষ্ক প্রানীর ক্ষেত্রেও উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্রকৃতি রহস্য খুব পছন্দ করে। প্রত্যেক সৃষ্টির কাছে বিভিন্ন বিষয়কে সে রহস্যময় করে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
প্রকৃতিতে যত রকমের বিচিত্র রকমের ঘটনা ঘটেছে মধ্যে “জিম টুইন ব্রাদারের” ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। গুগলে এই দুই “জিম” জমজ ভাইদের সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে। আপনাদের নিশ্চয়ই কেউ কেউ এই দুই জমজ ভাই সম্পর্কে জেনে থাকবেন। তবে যারা তাদের সম্পর্কে জানেন না তারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এই জমজ দুই ভাই এর অদ্ভুত জীবনকাহিনী সম্পর্কে জানার পর আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না।
কেন তারা তাদের জীবনের কাহিনি দিয়ে পৃথিবীতে হইচই ফেলে ছিলেন এবং তাদের বিখ্যাত হওয়ার পেছনের কারণ কি? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাদেরকে তাদের জন্ম হওয়ার ঘটনা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। অতঃপর আপনি বুঝতে পারবেন তাদের জীবনযাপনের ঘটনাগুলো প্রকৃতপক্ষে এতটা রহস্যময় কেন?
জিম টুইন ব্রাদার আসলে কারা?
এই দুই জমজ ভাই উভয়ের নাম-ই জিম। তবে তারা তাদের জন্মের প্রায় তিন সপ্তাহ পর ভিন্ন দম্পতি দ্বারা দত্তক প্রাপ্ত হোন৷ দুই ভাইয়ের কেউ জানতেন না তাদের পরস্পরের একটি জমজ ভাই রয়েছে এবং তারা একে অপরের থেকে প্রায় ৪৫ মাইল দূরে অবস্থান করতেন।
জেমস জিম লুইস
জেমস জিম লুইস নামক ভাইটি ১৯৪০ সালে তার জন্ম হওয়ার প্রায় তিন সপ্তাহ পর দত্তকপ্রাপ্ত হোন। তার পালক পিতা মাতারা তার নামকরণ করে “জেমস জিম লুইস” হিসেবে। এই জেমসের ছোটোবেলায় একটি পোষা কুকুর ছিল যেটার নাম ছিল টয়। স্কুল জীবনে থাকাকালীন তিমি কারপেন্টারী ও গণিত করতে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু কখনোই বানান চর্চার দিকে আগ্রহী ছিলেন না। পরবর্তীতে তিনি লিন্ডা নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। কিন্তু বেশিদিন এই বিবাহ টিকিয়ে রাখতে পারেননি। লিন্ডাকে ডিভোর্স দিয়ে তিনি পরবর্তীতে বেটি নামের এক মহিলাকে বিবাহ করেন। অতঃপর তাদের ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয় যার নাম জেমস অ্যালান লুইস। জেমস অ্যালান কাজ করতো একজন সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে, একই সাথে সে ছিলো চেইন স্মোকার তথা খুবই বেশি পরিমাণে ধূমপায়ী।
জেমস জিম স্প্রিঞ্জার
জেমস জিম স্প্রিঞ্জার নামের অপর এই ভাইটি জেমস জিম লুইসের যমজ ভাই ছিলেন। তিনিও তার ভাইয়ের মতো ১৯৪০ সালে জন্ম হওয়ার পর ভিন্ন এক দম্পতি দ্বারা দত্তকপ্রাপ্ত হোন৷ তার পালিত পিতা মাতা তার নাম রাখেন “জেমস জিম স্প্রিঞ্জার”। তার একটি পোষা কুকুর ছিল যেটার নাম ছিল টয়। তিনি স্কুলজীবনে কারপেন্টারী ও গণিত করতে বেশি ভালোবাসতেন। তবে বানান শিক্ষায় বেশি আগ্রহী ছিলেন না। তারও বিয়ে হয় লিন্ডা নামের এক নারীর সাথে (ভিন্ন মানুষ নাম এক) যদিও তার সাথে বিবাহ সম্পর্কটি বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তিনি লিন্ডাকে ডিভোর্স দিয়ে পরবর্তীতে বেটি (ভিন্ন মানুষ, নাম এক) নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন৷ তাদের এক পুত্র সন্তান হয় যার নাম ছিল জেমস অ্যালান স্প্রিঞ্জার। সে একজন সিকিউরিটি গার্ড এর পদে চাকুরী করতো এবং একই সাথে তীব্র মাপের চেইন স্মোকার ছিল।
অবিশ্বাস্য ভাবে তাদের জীবনের বিশাল একটা অংশ একে অপরের সাথে মিলে গিয়েছিল। অথচ তারা একে অপরের থেকে প্রায় ৪৫ মাইল দূরে অবস্থান করতেন। এমনকি তারা কেউ জানতেন না তাদের প্রত্যেকের যে একটা জমজ ভাই রয়েছে।
তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার যে তাদের প্রত্যেকের দত্তক নেওয়া মা ঠিকই জানতেন তাদের পরস্পরের জমজ ভাই রয়েছে। যদিও স্প্রিঞ্জারের মা জানতেন, তার পালক পুত্রের যমজ ভাইটি মারা গেছে। অন্যদিকে লুইসের মা জানতেন তার যমজ ভাই বেঁচে আছেন। একদা তিনি তার দত্তক নেওয়া সন্তান লুইসের এডপশন পেপার ফাইনালাইজ করার কাজে সেখানকার এক অফিসে যান। তখন তিনি বলতে শুনেন, “অন্য বাচ্চাটির নামও জেমস রাখা হয়েছে”, এই সূত্র ধরেই পরবর্তীতে জিম লুইস তার যমজ ভাইকে খোঁজা শুরু করে দেয়। জেমস লুইস ইচ্ছাপত্র প্রমাণক আদালতে (probate court) এই বিষয়ে একটু খোঁজাখুঁজি শুরু করলেই পেয়ে যায় তার এডপশনের যাবতীয় রেকর্ড এবং সেখান থেকেই বেরিয়ে আসে স্প্রিঞ্জারের পরিবারের সকল তথ্য যিনি কি-না সেসময় পিকুয়াতে অবস্থান করছিলেন।
পরবর্তী তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করেন এবং যোগাযোগের প্রায় চার দিন পর সাক্ষাৎ করেন। সেই সাক্ষাতেই তারা জানতে পারে একে অপরের সাথে অবিশ্বাস্য মিলগুলো সম্পর্কে। উপরোক্ত জীবন সম্পর্কিত মিলগুলো তো রয়েছেই সেই সাথে তারা এও আবিষ্কার করতে পারেন যে, তাদের দুজনেরই টেনশনের কারণে মাথাব্যথা শুরু হওয়ার সমস্যা রয়েছে। শুধু তাই নয়, দাঁত দিয়ে নখ কাটার মতো বাজে অভ্যাস তাদের দুজনেরই রয়েছে। একই সাথে তারা অবিশ্বাস্য ভাবে একই ব্র্যান্ডের সিগারেট খেয়ে থাকেন এবং ছুটির দিনে একই ফ্লোরিডা বিচে ঘুরতে যান।
তাদের এই দুই ভাই সম্পর্কে অবিশ্বাস্য রহস্যময় ঘটনাগুলোর কাহিনী ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়। অতঃপর ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটা এর রিসার্চাররা যারা কিনা টুইন বেবিদের উপর দীর্ঘসময় থেকে বিভিন্ন রকমের গবেষণা চালিয়েছিলেন তারা এই জিম টুইন ব্রাদার্স এর উপর রিসার্চ করতে আগ্রহী হন। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল, ঠিক কি কারণে এই দুই জমজ ভাই একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা না থাকা সত্ত্বেও হুবহু একই লাইফস্টাইল ধারণ করেছেন।
এই দুই ভাই সম্পর্কে শেষ তথ্য হিসেবে যা জানা যায় তা হলো, তারা দু’ভাই একে অপরের খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায় এবং জিম লুইস একটা সময় গিয়ে তার বেটি নামক ওয়াইফকে ডিভোর্স দিয়ে দেন এবং স্যান্ডি নামের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তবে এই সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি যে, শেষপর্যন্ত জেমস স্প্রিঞ্জার তার জীবনে স্যান্ডি নামের কাউকে পেয়েছেন কি-না।
সুপ্রিয় পাঠক, আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে? আশা করি আর্টিকেলটি আপনারা উপভোগ করেছেন। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।
তথ্যসূত্র: https://www.mamamia.com.au/the-jim-twins/