ভিটামিন বি ১২ আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেন জরুরি?
সুস্থ দেহ ও মনের জন্য বিভিন্ন ভিটামিন এর প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই কম-বেশী জানি। কিন্তু, কোন ভিটামিন কেন প্রয়োজন তা জানি কি? এই নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় হলো ভিটামিন বি ১২ এর প্রয়োজনীয়তা। দেহের লোহিত রক্ত-কণিকার উৎপাদন থেকে নখের বৃদ্ধি, এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজেই প্রয়োজন ভিটামিন বি ১২। ভিটামিন বি ১২ কেন প্রয়োজন, কোন খাবারে পাবেন, কতটুকুই বা খাবেন জানতে চাইলে পড়ুন শেষ পর্যন্ত।
ভিটামিন বি ১২ কোবালামিন নামেও পরিচিত। আমাদের দেহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি ১২, ৪ বছর পর্যন্ত জমিয়ে রাখে। আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন প্রস্রাবের সাথে দেহ থেকে বেরিয়ে যায়। শরীর ঠিক রাখতে ভিটামিন বি নানাভাবে সাহায্য করে। তার মধ্যে প্রধান পাঁচটি নীচে আলোচনা করা হলো:
১. লোহিত–রক্ত কণিকার গঠন:
লোহিত রক্ত কণিকা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে যায় দেহের কোষে কোষে। তারা কোষ থেকে দূষিত কার্বন ডাই অক্সাইডও ফুসফুসে নিয়ে যায়। মানবদেহে প্রতি মিনিটে তৈরী হয় লক্ষ লক্ষ লোহিত রক্ত কণিকা। বি ১২ এর অভাব ঘটলে এই কণিকা গুলো এত দ্রুত তৈরী হতে পারে না। যদি দেহে ভিটামিন বি ১২ এর সরবরাহ খুব কমে যায়, লোহিত রক্ত কণিকার আকার বদলে যায়। এর ফলে হয় মেগালোব্লাস্টিক এ্যানিমিয়া। এই ধরনের এ্যানিমিয়ার লক্ষণ হলো:
- ক্লান্তি
- মনোসংযোগ করতে না পারা
- শুষ্ক ত্বক
এ্যানিমিয়া হবার আরও কারণ আছে। যেমন, আয়রনের স্বল্পতা আর অতিরিক্ত রক্তপাত। তবে, ভিটামিন বি ১২ এর পরিমান ঠিক রাখাটাও এ্যানিমিয়া প্রতিরোধের একটি উপায়।
২. ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করতে পারে:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের মগজ সংকুচিত হতে থাকে। সেই সাথে নিউরনের পরিমানও কমতে থাকে। বয়ষ্কদের মধ্যে মগজের ক্ষয়ে যাওয়া কমতে পারে ভিটামিন বি-১২ এর সাহায্যে। একটি সুস্থ ও কর্মক্ষম ব্রেইন ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ভিটামিন বি ১২ এর নির্দিষ্ট পরিমান বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন।
৩. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা:
সাধারনত মুড স্যুইং ও ডিপ্রেশনের চিকিৎসায় ভিটামিন বি ১২ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে দেয়া হয়। আমাদের মুড নিয়ন্ত্রন করে সেরোটনিন নামের একটি কেমিক্যাল। এটি আমাদের মেজাজ, আবেগ এবং ঘুম নিয়ন্ত্রন করে। সেরাটোনিন এর বিকাশে সাহায্য করে ভিটামিন বি ১২। তাই, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন বি ১২ এর সঠিক পরিমান বজায় রাখা জরুরি।
৪. জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ:
গর্ভবতী মহিলাদের ভিটামিন বি ১২ এর চাহিদা বেশি থাকে। গর্ভবতী মহিলার ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি থাকলে শিশু বিকলাংগ হতে পারে। অথবা অপরিণত মগজ ও খুলি নিয়ে শিশু জন্মাতে পারে। গর্ভধারনের ঠিক আগে ও পরে ফলিক এসিডের সাথে ভিটামিন বি ১২ সেবন করলে এই সম্ভাবনা অনেক কমে আসে।
৫. চুল, ত্বক ও নখের সুস্থতায়:
ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে শ্বেতী রোগ হয়। যার ফলে ত্বকে সাদা দাগ পড়ে। এছাড়া, চুলের লম্বা না হবার পেছনে কারন হলো ভিটমিন বি ১২ এর স্বল্পতা। ভিটামন বি ১২ এর অভাবে অনেক সময়ে জিহ্বায় ঘা ও মুখের আলসার হয়।
কারা ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি হবার ঝুঁকিতে আছেন?
যারা নিরামিষাসী অথবা কোন অসুস্থতার কারনে যাদের দেহে ভিটামন বি ১২ শোষিত না হয় সাধারণত তাদের ভিটামন বি ১২ এর অভাব জনিত সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও…
- ৬০ বছরের বেশি বয়ষ্ক ব্যক্তি।
- পাকস্থলির যেই অংশে ভিটামন বি ১২ শোষিত হয় সেই অংশ অপারেশন করে বাদ দিলে।
- ডায়াবেটিস এর কারনে যারা মেটেফরমিন ড্রাগ আছে এমন অসুধ ব্যবহার করেন।
- যারা একবারেই প্রাণীজ আমিষ খান না।
- বুক জ্বালাপোড়ার কারনে যারা দীর্ঘদিন ধরে এন্টাসিড সেবন করেন।
ভিটামন বি ১২ এর অভাব সহজে ধরা পড়ে না। এর ফলে হওয়া শারীরিক ক্ষতি পরে আর সারিয়ে তোলাও যায় না।
ভিটামন বি ১২ এর অভাবের লক্ষণগুলি
- ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- কোষ্ঠকাঠিন্য ও ক্ষুধা না লাগা
- হাত ও পায়ে অসাড়তা ও ঝিঁ ঝিঁ ধরা
- হাঁটার সময়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারা
- বিভ্রান্তি ও দুর্বল স্মৃতিশক্তি
- মসৃণ জিহ্বা
- ত্বক, চুল ও নখের পরিবর্তন
- ওজন কমে যাওয়া
- গায়ের রং হালকা ও হলদেটে হয়ে যাওয়া
- ডায়েরিয়া
- মাসিকের সমস্যা
- দৃষ্টিহীনতা
ভিটামন বি ১২ কতটুকু প্রয়োজন
দৈনিক কতটুকু ভিটামন বি ১২ আপনার প্রয়োজন তা নির্ভর করে আপনার বয়সের উপর। নিচের টেবিলে কোন বয়সে কতটুকুই ভিটামন বি ১২ দরকার তা দেখানো হয়েছে…
বয়স | পরিমান (মাইক্রোগ্রাম) |
০-৬ মাস | ০.৪ |
৭-১২ মাস | ০.৫ |
১-৩ বছর | ০.৯ |
৪-৮ বছর | ১.২ |
৯-১৩ বছর | ১.৮ |
১৪-১৮ বছর | ২.৪ |
পূর্ণবয়ষ্ক ব্যক্তি | ২.৪ |
গর্ভবতী কিশোরী ও মহিলা | ২.৬ |
ব্রেস্টফিডিং কিশোরী ও মহিলা | ২.৮ |
কোন কোন খাবারে ভিটামিন বি ১২ পাবেন?
ভিটামিন বি ১২ সাধারনত প্রাণীজ আমিষে পাওয়া যায়। যেমন…
- যেকোন প্রাণীর কলিজা ও যকৃত
- সব ধরনের মাংস
- মাছ
- ডিম
- দুধ, পনির ও দই
- ফর্টিফায়েড সিরিয়াল ও ইস্ট
কিছু অসুখের কারনে অনেকের দেহ খাবার থেকে ভিটামিন বি ১২ শোষণ করতে পারে না। তারা ভিটামিন বি ১২ সাপ্লিমেন্ট বড়ি হিসেবে অথবা নাকের ভেতরে স্প্রে হিসেবে সেবন করতে পারেন। কখনও কখনও ইনজেকশন হিসেবেও রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়।
ভিটামিন ১২ এর স্বল্পতা জনিত সমস্যাগুলি সাপ্লিমেন্ট নিয়ে কাটিয়ে ওঠা যায়। কিন্তু, ভিটামিন ১২ এর ঘাটতির ফলে সৃষ্ট মগজের ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি পূরন করা সম্ভব নাও হতে পারে। তাই আসুন সঠিক পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ গ্রহণ করি, সুস্থ্য জীবন যাপন করি।
রেফারেন্স লিংক –
https://www.healthline.com/nutrition/vitamin-b12-deficiency-symptoms#TOC_TITLE_HDR_2
https://ods.od.nih.gov/factsheets/VitaminB12-Consumer/
https://www.medicalnewstoday.com/articles/219822#deficiency-symptom
Very nicely written by the writer. Clear writting, and easy to understand. These information is really important for everyone.