কিডনিতে পাথর হওয়ার কিছু কারণ জেনে নিন
“কিডনির পাথর” জিনিসটা আসলে সেধরনের কঠিন পাথর নয় কিন্তু। মানবদেহের কিছু অসচেতনতার কারণে কিডনিতে ছোট /বড় বিভিন্ন পাথর আকৃতির কিছু পদার্থের সৃষ্টি হয়। আর তাই সেগুলোকে কিডনির পাথর বলা হয়।
কিডনিকে মানবদেহের পরিশোধন তন্ত্র বলা হয়। আর এই কিডনির যত রকমের রোগ আছে তার মধ্যে কিডনিতে পাথর রোগটি বেশ পুরনো।
কিডনির এই পাথরগুলো ঠিক কোথায় থাকে তা নির্দিষ্ট নয়। এটি কিডনির ভেতরেও থাকতে পারে, ইউরেটর এমনকি মুত্রথলিতে এসেও আটকে থাকতে পারে। যেখানেই থাকুক না কেন বিষয়টা যেমন অস্বস্তিকর তেমনি যন্ত্রণাদায়ক। এই সমস্যাটির সময় মতো চিকিৎসা না করলে কিডনি আংশিক কিংবা সম্পুর্ন অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। কেননা এই সমস্যা হলে কিডনির কার্যকারিতা কমতে থাকে।
কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণসমূহ-
কিডনির পাথরের নির্দিষ্ট কারণ বিশেষজ্ঞরাও ঠিক বলতে পারেন না কিন্তু, কিছু কিছু কারণ উল্লেখ করা আছে যার কারণে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। সেগুলো হলো-
*কিডনিতে বারবার সংক্রমণ
*পাথরের যথোপযুক্ত চিকিৎসা না করলে পুনরায় হতে পারে
*ক্যালসিয়াম জাতীয় খাদ্য খুব কম বা বেশি পরিমাণে খাওয়া
*অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যাথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহ থাকলে
*বংশগত, হরমোনগত এমনকি জন্মগত কারণেও এই সমস্যাটি হয়ে থাকে
*যারা মধ্যপ্রাচ্যে বাস করে তাদের প্রচুর ঘাম হয়, এ থেকেও রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে
*ভিটামিনের ঘাটতি, হরমোনের অস্বাভাবিকতা কিংবা শরীর অবশ থাকলেও এই রোগ হয়
*অতিরিক্ত অক্সালেট জাতীয় শাকসবজি ও টপিরামেট জাতীয় ঔষধ বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
*প্রচুর ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট খাওয়া
*ইনফ্লামেটরি বাওয়েল রোগ যাদের থাকে
*কম ফলফলাদি ও শাক সবজি খাওয়া
*খাবারে অধিক লবণ
*দৈনিক অল্প পানি পান
*বেশি লাল মাংস (গরু/খাসি) খাওয়া কিডনি পাথরের প্রধান কারণ
উক্ত কারণ গুলো কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। তবুও নিশ্চিত করে বলা যায় না আসলে ঠিক কোন কারণে পাথর হয়ে থাকে।
কিডনির পাথরগুলো গঠনের উপাদানের উপর ভিত্তি করে পাথরের ধরন তিন রকম হয়।এগুলো হলো-
(১) ক্যালসিয়াম ফসফেট/অক্সালেট পাথর
(২) সিস্টিন পাথর
(৩) ইউরিক এসিড/ইউরিক পাথর
আপনার কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
হ্যাঁ অন্যসব রোগের মতো এই রোগেরও কিছু লক্ষন আছে। এগুলো হলো-
*মাঝে মাঝে প্রসাবের সাথে ছোট ছোট পাথর যাওয়া
*কাপুনি দিয়ে জ্বর
*কোমরে তীব্র ব্যাথা এবং ব্যাথার সাথে বমি বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া
*রক্তবর্ন লাল/ঘন (একটু হয়ে আর না হওয়া)/দুর্গন্ধযুক্ত মুত্র বের হওয়া এবং সেই সাথে প্রচুর জ্বালা পোড়া করা
*হঠাৎ পেটের নিচের দুই পাশ,নাভীর উপর /তলপেটে ব্যাথা হওয়া
*পাথর মাঝে মাঝে নালিতে আটকে থাকে ফলে জনন ইন্দ্রিয় ব্যাথা করতে পারে
কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা কিভাবে নিশ্চিত হবেন?
কোমরে তীব্র ব্যাথা এর জোরদার লক্ষণ। কেননা কিডনির অবস্থান মানবদেহের পেছন অংশে। তবে সব কোমর ব্যাথাই কিন্তু কিডনিতে পাথর বোঝায় না। বিভিন্ন কারণেও এই ব্যাথা হতে পারে। তবে সচেতন থাকতে দোষ কি? কোমরে ব্যাথা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিডনিতে পাথর হয়েছে কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসক এক্স-রে করতে দিতে পারেন। আবার আল্ট্রাসনোগ্রামও দিতে পারেন। উভয় পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনিতে পাথর শনাক্ত করা যায়।
কোনো কারণে কিডনিতে পাথর হয়ে গেলে কি করবেন? এর চিকিৎসাই বা কি?
আসলে এর চিকিৎসা পাথরের আকার আকৃতি ও কোথায় আছে তার উপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাথরের আকৃতি ছোট অর্থাৎ ৬ মিলিমিটারের নিচে হলে তা এমনেই বেরিয়ে আসবে। ছোট অবস্থায় ঔষধ সেবন, ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যাথানাশক ঔষধ সেবন পর্যাপ্ত পানি যথেষ্ট।
আর পাথরের আকৃতি বড় হলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু অস্ত্রোপচার হওয়ার পরেও পাথর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি ঔষধ সেবনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এই রোগটি মারাত্মকও বিবেচিত করা হয়। কেননা কিডনি একবার অকার্যকর হয়ে গেলে মানবদেহে নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়। দেহে পানি আসতে শুরু করে। মানবদেহের বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন বন্ধ হয়ে যায়।
মারাত্নক এই ব্যাধি না হওয়ার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। এগুলো হলো-
*পরিমিত পানি পান করা। তবে একেবারে বেশিও না আবার কম পানিও পান করা যাবে না। পানি বেশি পান করলে আপনার কিডনি সেটা ব্যালেন্স করতে পারবেনা। আবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়াও উচিৎ নয়। শুধুমাত্র পিপাসা পেলেই পানি পান করা উচিৎ। কারণ আমাদের মস্তিষ্ক তখনই আমাদের পানি খাওয়ার জন্য সিগনাল দেয় যখন আমাদের দেহে পানির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়
*আমিষ জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া
*মুত্র আটকিয়ে না রাখা
*অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম পরিহার করা
*দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। পরিমিত খেতে হবে
*কোনো কারণে বারবার ইউরিন ইনফেকশন হলে তার চিকিৎসা করা
আজকে এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন।